জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউনের আজ দ্বিতীয় দিন। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানকে অপসারণ ও প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে তারা কেন্দ্রের কর্মসূচি পালন করছেন। তবে এ ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কোন কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হয়নি।
রোববার (২৯ জুন) দ্বিতীয় দিনের মতো কমপ্লিট শাটডাউন এর কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে সকাল থেকেই আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। কাস্টমস হাউজের কোন কোন গ্রুপের দরজায় তালা মারা থাকতে দেখা গেছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এনবিআরের সার্ভার লাইন। বন্ধ রয়েছে পণ্যের পরীক্ষণ, শুল্কায়ন ও খালাস কার্যক্রমসহ সকল ধরনের কাজকর্ম। তবে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে দু‘দেশের মধ্যে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে বলে চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ওসি ইলিয়াস হোসেন মুন্সি জানিয়েছেন।
সরেজমিনে কাস্টমস হাউজে যেয়ে দেখা গেছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউনের কারনে দ্বিতীয় দিনের মতো বেনাপোল কাস্টমস হাউজ খোলা থাকলেও কোন কর্মকর্তার উপস্থিতি দেখা যায়নি। কাস্টমসের কোন কোন শুল্কায়ন ও কর্মকর্তাদের রুমের দরজায় তালা ঝুলতে দেখা গেছে। বন্ধ আছে শুল্কায়নের কার্যক্রমসহ সকল ধরনের কাজকর্ম। শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে সরকার এ বন্দর থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পণ্য চালান সরবরাহ নিতে না পারায় ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন।
এদিকে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় বেনাপোল ও পেট্রাপোল দু‘দেশের বন্দর এলাকায় অসংখ্য পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে বলে বন্দর ব্যবহারকারিরা দাবি করেছেন। যার অধিকাংশই বাংলাদেশের শতভাগ রপ্তানিমুখি গার্মেন্টস শিল্পের কাঁচামাল এবং পঁচনশীল পণ্য রয়েছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনলাইন সার্ভার বন্ধ থাকায় দু‘দিন আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত কোনও বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা যায়নি। সার্ভার বন্ধের কারণে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে যেমন কোন আমদানি- রপ্তানি হচ্ছে না। তেমনি পণ্যের পরীক্ষণ, শুল্কায়ন ও খালাস সংক্রান্ত সকল কাজকর্ম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, কাস্টমসের কমপ্লিট শাট ডাউন এর ফলে আমদানিকারকরা তাদের আমদানি করা পণ্য সময় মতো খালাস নিতে পারছেন না। এতে বন্দরের গুদাম ভাড়া বাবদ প্রতিদিন একটি বড় অংকের টাকা তাদের ডেমারেজ গুনতে হচ্ছে। অনেক পণ্যের গুনগত মানও নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন।
অপরদিকে ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, পেট্রাপোলে সার্ভার জটিলতায় আমাদের ব্যবসায়ে অনেক ক্ষতি হয়েছিল। এখন আবার বাংলাদেশের এনবিআরের কর্মকর্তাদের কাজ বন্ধে আমরা পণ্য রপ্তানি করতে পারছি না। বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় শত শত পণ্যবাহী ট্রাক পেট্রাপোল বন্দর এলাকা, বন্দরের ট্রাক টার্মিনাল, পেট্রাপোল পার্কিং ও বনগাঁ পার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রতি দিন কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এক দিন পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলে প্রায় ১১৫ কোটি বিদেশি মুদ্রা আয় থেকে ভারত সরকার বঞ্চিত হয়। যেহেতু এটা বাংলাদেশের ব্যাপার সেহেতু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পণ্য আমদানি-রপ্তানি ফের শুরু করা হবে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবীর তরফদার বলেন, কাস্টমস কর্মকর্তাদের আন্দোলনের কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে শনিবার সকাল থেকে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। তবে এ সময়ে বেনাপোল বন্দর থেকে পণ্য আনলোড করে ভারতীয় খালি ট্রাকগুলো সে দেশে ফেরত যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/এএজে